আজ শুক্রবার, ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে বাড়ি ছাড়া করলেন ডাক্তার স্বামী

স্টাফ রিপোর্টার:
স্বামী ও তার বোন এবং বোন জামাই এক গৃহবধুয়ে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। গলা টিপে হত্যা চেষ্টা চালিয়ে নির্যাতিত অই গৃহবধূর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখে এবং থানায় উল্টো নির্যাতিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। মারধরের শীকার গৃহবধূ বাবার বাড়িতে গেলে স্বামী তার মাকে ফোন করে বলে, আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে ফতুল্লার আদর্শ চাষাড়া এলাকা নিবাসি ডাক্তার আলমগীর হোসাইন ও তার পরিবার।
এনিয়ে নির্যাতিত গৃহবধূ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও র‌্যাব ১১ বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
নির্যাতিত অই গৃহবধূর নাম রেশমি ইসলাম। সে জুরাইন, কদমতলী ঢাকার হাশেম মাতবরের মেয়ে। অভিযুক্ত ডাক্তার আলমগীর হোসাইন ফতুল্লায় অবস্থিত শোভন গ্রুপ অব কোম্পানীতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
রেশমি ইসলাম অভিযোগে জানান, ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর ফতুল্লা থানা এলাকার আদর্শ চাষাড়া নিবাসি ডাঃ আলমগীর হোসাইনের সাথে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক তিন লাখ টাকা কাবিনে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের বিশ দিন পর থেকেই স্বামী ডাঃ আলমগীর হোসাইন পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে, তা শারিরিক নির্যাতনের দিকে গড়ায়। স্বামী ডাঃ আলমগীর হোসাইনের সাথে তার বোন কুলসুম বেগম ও বোন জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন তিন জন মিলে প্রায়ই যৌতুকের দাবিতে তাকে মারধর করে। পরবর্তিতে তারা তিন জন ব্যাপক মারধর করে রেশমি ইসলামকে বাড়ি থেকে বের করে করে দেয়। স্বামী ডাঃ আলমগীর হোসাইনের সাথে তার বোন কুলসুম বেগম ও বোন জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন রেশমি ইসলামের গলা টিপে হত্যা চেষ্টা করে। এবং সেসময় তারা জোড় করে রেশমি ইসলামের স্বাক্ষর একটি সাদা কাগজে নেয় বলে জানান নির্যাতিত এই নারী। সে নিরুপায় হয়ে তার বাবার বাড়ি জুরাইন চলে যান। বাবার বাড়িতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার মা কাছে তার স্বামী ফোন করে বলেন, আপনার মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। তার মা প্রতি উত্তরে তার স্বামীকে বলে আমার মেয়ে আমার সামনে। তুমি আমার মেয়েকে কেন মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এ কথা বলার ডাক্তার আলমগীর ফোনটি কেটে দেয়। তাকে ব্যাপক মারধরের ফলে শারিরিক ভাবে দূর্বল হয়ে পরে। রেশমি ইসলাম ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন।
পরবর্তীতে রেশমি ইসলাম ২০ অক্টোবর ফতুল্লা থানায় অভিযোগ করতে যান। পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে বলে জানান তিনি। পরে তিনি নিরুপায় হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। পুলিশ সুপারের সুপারিশে ফতুল্লা থানার ওসির কাছে যায় রেশমি।
রেশমি ইসলাম অভিযোগ করেন, ফতুল্লা থানার ওসি কামাল উদ্দিন তাকে চার দিন ধরে ঘুরিয়ে মামলা না নিয়ে ৩১ অক্টোবর অভিযুক্ত ডাঃ আলমগীর হোসাইনকে ডেকে এনে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেন। এবং তার দেয়া অভিযোগের এজহারপত্র ও মেডিকেল সার্টিফিকেট অভিযুক্ত ডাক্তারের কাছে হস্তান্তর করে দেন।
বাদী রেশমি ইসলাম জানান, পুলিশ নির্যাতিতের পাশে না দাঁড়িয়ে অভিযুক্তকে এনে আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা চালায়, এর ফলে নির্যাতিত মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা হারাবে।
রেশমি ইসলাম আরও জানান, এনিয়ে কয়েকবার বিচার শালিস হয়। বিচার শালিসেও বিচারকদের সামনেই ডাঃ আলমগীর হোসাইন পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এবং তার বোন কুলসুম বেগম হুমকি দিয়ে বলেন, পাঁচ লাখ টাকা আনলে এ মেয়ে আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে থাকতে পারবে। অন্যথায় পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আমার ভাইকে (ডাঃ আলমগীর হোসাইনকে) অন্যত্র বিয়ে দেবো।
পরবর্তিতে রেশমি ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার বিজ্ঞ মহানগর হাকিমের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৫২৫/২০১৭।
মামলার করার পরও নির্যাতিত রেশমি ইসলামকে নানাভাবে হয়রানি করছে অভিযুক্ত ডাক্তার আলমগীর হোসাইন, তার বোন কুলসুম বেগম ও বোন জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি আরও জানান, তার পাসপোর্ট, শিক্ষা জিবনের প্রাপ্ত সার্টিফিকেট সব অই বাড়িতে তাকে এগুলো আনতে দেয়া হয় নি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ